সম্পর্কে
ইসলাম ধর্মের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বাণী মানবজাতির জন্য পথনির্দেশিকা ও কল্যাণের উৎস। তাঁর কথা ও কর্ম—যা হাদিস দ্বারা সংরক্ষিত—এবং পবিত্র কুরআনের শিক্ষা একত্রে মুসলিম জীবনের ভিত্তি রচনা করেছে। এই নিবন্ধে আমরা নবীজির (সাঃ) কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাণী, হাদিস ও কুরআনের সংশ্লিষ্ট আয়াত নিয়ে আলোচনা করব।
কুরআন: আল্লাহর শেষ বাণী,
কুরআন ইসলামের প্রধান গ্রন্থ এবং “মানবজাতির জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান”। আল্লাহ বলেন:
"এটি এমন এক কিতাব যা আমি নাযিল করেছি, যাতে মানুষ গভীরভাবে চিন্তা করে এবং বুদ্ধিমানরা উপদেশ গ্রহণ করে।"
(সুরা সাদ, ৩৮:২৯)
কুরআনের কিছু মূল শিক্ষা:
✅ তাওহিদ (একত্ববাদ): আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।
✅ আখিরাতের বিশ্বাস: মৃত্যুর পর পুনরুত্থান ও হিসাব-নিকাশ।
✅ ন্যায়বিচার: সমাজে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা।
১. ঈমান ও তাকওয়ার বাণী,
নবীজি (সাঃ) বলেছেন:
ঈমান হল এই যে, তুমি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ, আখিরাত ও তাকদিরের ভালো-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে।"
(সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫০)
এই হাদিসে ঈমানের মূল স্তম্ভগুলো বর্ণিত হয়েছে। কুরআনে আল্লাহ বলেন:
"যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ ও উত্তম স্থান।"
(সুরা রা’দ, ১৩:২৯)
২. সত্যবাদিতা ও আমানতদারিতা,
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সত্যবাদিতাকে ঈমানের অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন:
"সত্যবাদিতা পুণ্যের দিকে পরিচালিত করে, আর পুণ্য জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। মানুষ সত্য বলতে বলতে আল্লাহর কাছে সিদ্দীক (অতি সত্যবাদী) হিসেবে লিখিত হয়।"
(সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬০৯৪)
কুরআনে বলা হয়েছে:
"নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন ন্যায়বিচার, সৎকর্ম ও আত্মীয়-স্বজনকে দান করতে এবং তিনি নিষেধ করেন অশ্লীলতা, মন্দকর্ম ও জুলুম থেকে।’’
(সুরা নাহল, ১৬:৯০)
৩. দয়া ও ক্ষমার শিক্ষা,
নবীজি (সাঃ) ছিলেন সমগ্র মানবজাতির জন্য রহমত। তিনি বলতেন:
"যে ব্যক্তি দয়া পায় না, সে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত।"
(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৩১৮)
কুরআনে আল্লাহ তাঁর রাসূলের চরিত্র বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন:
"আপনি তো মহান চরিত্রের অধিকারী।"
(সুরা আল-কালাম, ৬৮:৪)
৪. জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব,
ইসলাম জ্ঞানচর্চাকে ফরজ করেছে। রাসূল (সাঃ) বলেছেন:
"জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর ফরজ।"
(ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ২২৪)
কুরআনে জ্ঞানের মর্যাদা সম্পর্কে বলা হয়েছে:
"বলুন, যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে?"
(সুরা আয-যুমার, ৩৯:৯)
৫. সমাজিক ন্যায়বিচার ও ভ্রাতৃত্ব,
নবীজি (সাঃ) বলেছেন:
"তোমরা পরস্পর ভাই ভাই।"
(সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬০১৮)
কুরআনে সমতা প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে:
"নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়বিচার, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন।"
(সুরা আন-নাহল, ১৬:৯০)
৬. ধৈর্য্য ও সংযমের শিক্ষা,
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলতেন:
"ধৈর্য্য হলো ঈমানের অর্ধেক।"
(সুনান তিরমিজি, হাদিস নং ৩৫১৭)
কুরআনে ধৈর্যশীলদের জন্য সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে:
"নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদেরকে অগণিত পুরস্কার দেওয়া হবে।"
(সুরা আয-যুমার, ৩৯:১০)
৭. শেষ বিচারের স্মরণ,
নবীজি (সাঃ) বলেছেন:
"মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করো, কারণ তা গুনাহকে নষ্ট করে দেয়।"
(সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৪২৫৮)
কুরআনে বলা হয়েছে:
"প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে এবং কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে পরিপূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে।"
(সুরা আল-ইমরান, ৩:১৮৫)
উপসংহার,
মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বাণী শুধু ধর্মীয় নির্দেশনা নয়, বরং তা সমগ্র মানবজাতির জন্য জীবনব্যবস্থা। হাদিস ও কুরআনের সমন্বয়ে তাঁর শিক্ষা মানুষকে সত্য, ন্যায় ও শান্তির পথ দেখায়। তাঁর জীবনাদর্শ অনুসরণ করাই মুমিনের প্রকৃত লক্ষ্য হওয়া উচিত।
"নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর উপর দরুদ পাঠান। হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর উপর দরুদ পাঠাও এবং যথাযথভাবে সালাম পেশ করো।"
(সুরা আল-আহযাব, ৩৩:৫৬)
ইসলামিক শিক্ষা, নবীর (সাঃ) বাণী, হাদিস ও কুরআনের আলোচনা আমাদের “জাগতিক ও আধ্যাত্মিক উভয় জীবনকে” পরিশুদ্ধ করে। এই শিক্ষা অনুসরণ করেই আমরা “সফলতা” অর্জন করতে পারি—দুনিয়া ও আখিরাতে।
এই বাণীগুলো আমাদের জীবনে আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করুক—এই কামনা করি।
“আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে চলার তাওফিক দিন। আমিন!”