#রিয়াদুস_সালেহীন দ্বিতীয় খণ্ড অনুচ্ছেদঃ১২ উত্তম কর্মের জন্য সুসংবাদ ও মুবারকবাদ দেয়া ৷

Muhammads words
0

قَالَ اللهُ تَعَالَى : فَبَشِّرْ عِبَادِ الَّذِينَ يَسْتَمِعُونَ الْقَوْلَ فَيَتَّبِعُونَ أَحْسَنَهُ.

মহান আল্লাহ বলেন:

“অতএব সুসংবাদ দাও আমার বান্দাদের যারা মনোযোগ সহকারে কথা শোনে এবং তার মধ্যে যা উত্তম তা গ্রহণ করে।” (সূরা আয্ যুমার: ১৭-১৮)

وَقَالَ تَعَالَى : يُبَشِرُهُمْ رَبُّهُمْ بِرَحْمَةٍ مِنْهُ وَرِضْوَانٍ وَجَنَّاتٍ لَهُمْ فِيهَا نَعِيمٌ مُقِيمٌ.


“তাদের রব তাদেরকে নিজের রহমত ও সন্তোষ এবং এমন জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন, যেখানে তাদের জন্য চিরস্থায়ী সুখের সামগ্রী সুবিন্যস্ত রয়েছে।” (সূরা আত্ তাওবা: ২১)

وَقَالَ تَعَالَى : وأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنتُمْ تُوعَدُونَ.


“তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর জান্নাতের যার প্রতিশ্রুতি তোমাদের সাথে করা হয়েছে। (সূরা হা-মীমুস্ সাজদা: ৭৩)

وَقَالَ تَعَالَى : فَبَشِّرْنَاهُ بِغُلَامٍ حَلِيمٍ


“আমরা তাকে সুসংবাদ দিলাম এক পরম ধৈর্যশীল সন্তানের।” (সূরা আস সাফাত: ১০১)

“আমার দূতগণ ইবরাহীমের নিকট সুসংবাদ নিয়ে এলো।” (সূরা হূদঃ ৬৯

وَقَالَ تَعَالَى : ولَقَدْ جَاءَ رُسُلُنَا إِبْرَاهِيمَ بِالْبُشْرَى. : وقَالَ تَعَالَى : فَنَادَتْهُ الْمَلَائِكَةُ وَهُوَ قَائِمَ يُصَلِّي فِي الْمِحْرَابِ أَنَّ اللهَ يُبَشِّرك بيحى.


“ফেরেশতারা তাকে আওয়ায দিল, যখন সে (যাকারিয়া) মেহরাবে দাঁড়িয়ে নামায পড়ছিল, আল্লাহ তোমাকে ইয়াহ্ইয়ার সুসংবাদ দিচ্ছেন।” (সূরা আলে ইমরান: ৩৯)

وقال تعالى : إِذْ قَالَتِ الْمَلائِكَةُ يَا مَرْيَمُ إِنَّ اللَّهَ يُبَشِّرُكَ بِكَلِمَةٍ مِّنْهُ اسْمُهُ الْمَسِيحُ


“যখন ফেরেশতারা বলল, হে মারইয়াম! আল্লাহ তোমাকে তাঁর নিজের এক বাণীর সুসংবাদ দিচ্ছেন। তার নাম মসীহ ঈসা ইবনে মারইয়াম...।” (সূরা আলে ইমরান: ৪৪)

وقال تعالى : وامْرَأَتُهُ قَائِمَةٌ فَضَحِكَتْ فَبَشِّرْنَاهَا بِإِسْحَاقَ وَمِنْ وَرَاءِ اسْحَاق يَعْقُوبَ.


“ইব্রাহীমের স্ত্রী দণ্ডায়মান ছিল। সে হেসে ফেলল। আমরা তাকে ইসহাকের সুসংবাদ দিলাম এবং ইসহাকের পরে ইয়াকূবের।” (সূরা হুদ: ৭১)

এ সম্পর্কে বহু সংখ্যক হাদীস রয়েছে। সহীহ হাদীস গ্রন্থসমূহে সেসব হাদীস ছড়িয়ে আছে। তার মধ্য থেকে কতক হাদীসের উল্লেখ করা যাচ্ছে।

۷۰۸- عَنْ أَبِي إِبْرَاهِيمَ وَيُقَالُ أبو مُحَمد وَيُقَالُ أَبُو مُعَاوِيَةَ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بن أوفى رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنْ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَشِّرَ خَدِيجَةَ بِبَيْت فِي الْجَنَّةِ مِنْ قَصَبِ فِيْهِ لَا صَخَبَ وَلَا نَصَبَ- متفق عليه


৭০৮। আবু ইব্রাহীম অথবা আবু মুহাম্মাদ অথবা আবু মু'আবিয়া আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদীজা (রাঃ)-কে জান্নাতে মুক্তা নির্মিত একটি প্রাসাদের সুসংবাদ দিয়েছেন যাতে কোনরূপ প্রতিধ্বনি, শোরগোল বা ক্লেশ থকবে না। (ববুখারী ও মুসলিম)

۷۰۹- وَعَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ تَوَضَّأَ فِي بَيْتِهِ ثُمَّ خَرَجَ فَقَالَ لَأَلْزَمَنُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا كُونَنَّ مَعَهُ يَوْمِنْ هَذَا فَجَاءَ الْمَسْجِدَ فَسَأَلَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالُوا وَجْهَ هَهُنَا قَالَ فَخَرَجْتُ عَلَى أَثَرِهِ أَسْأَلُ عَنْهُ حَتَّى دَخَلَ بِثَرَ ارِيْس فَجَلَسْتُ عِنْدَ الْبَابِ حَتَّى قَضَى رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَاجَتَهُ وَتَوَضَّأَ فَقُمْتُ إِلَيْهِ فَإِذَا هُوَ قَدْ جَلَسَ عَلَى بِثْرِ اريس وتوسط قُفْهَا وَكَشَفَ عَنْ سَاقَيْهِ وَدَلَاهُمَا فِي الْبِشْرِ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ ثُمَّ انْصَرَفتُ فَجَلَسْتُ عِنْدَ الْبَابِ فَقُلْتُ لَاكُونَنَّ بَوَابَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْيَوْمَ فَجَاءَ أَبُو بَكْرٍ فَدَفَعَ الْبَابَ فَقُلْتُ مَنْ هَذَا فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ فَقُلْتُ عَلَى رسُلِكَ ثُمَّ ذَهَبْتُ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ هذا أبُو بَكْرٍ يَسْتَأْذِنُ فَقَالَ الَّذِنَ لَهُ وَيَشْرَهُ بِالْجَنَّةِ فَأَقْبَلْتُ حَتَّى قُلْتُ لِأَبِي بَكْرِ دْخُلَ وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يبشرككَ بِالْجَنَّةِ فَدَخَلَ أَبُو بَكْرٍ حَتَّى جَلَسَ عَنْ يَمِينِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَعَهُ فِي الْقُفِ وَدَلَى رِجْلَيْهِ فِي الْبِشْرِ كَمَا صَنَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَشَفَ عَنْ سَاقَيْهِ ثُمَّ رَجَعَتْ وَجَلَسْتُ وَقَدْ تَرَكتُ أخي يَتَوَضًا وَيَلْحَقُنى فَقُلْتُ إنْ يُرِدِ اللهُ بِفُلان يُرِيدُ أَخَاهُ - خَيْراً يَأْتِ بِهِ فَإِذَا إِنْسَانٌ يُحَرِكَ الْبَابَ فَقُلْتُ مَنْ هذا فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ فَقُلْتُ عَلَى رِسُلِكَ ثُمَّ جِنْتُ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ وَقُلْتُ هذا عُمَرُ يَسْتَأْذِنُ فَقَالَ الَّذِنَ لَهُ وَيَشْرَهُ فَقُلْتُ أذِنَ وَيُبَشِّرُكَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْجَنَّةِ فَجِئْتُ عُمَرَة بالْجَنَّة فَدَخَلَ فَجَلَسَ مَعَ رَسُولِ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْقُفْ عَنْ يَسَارِه وَدَلَّى رِجْلَيْهِ فِى الْبِشْرِ ثُمَّ رَجَعْتُ فَجَلَسْتُ فَقُلْتُ إِنْ يُرِدِ اللَّهِ بِفُلانٍ خَيْرًا يَعْنِي أَخَاهُ يَأْت به فَجَاءَ إِنْسَانٌ فَحَرِّكَ الْبَابَ فَقُلْتُ مَنْ هَذَا فَقَالَ عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ فَقُلْتُ عَلَى رِضْلِكَ وَجِنْتُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ إِثْدَنَ لَهُ وَبَشَرَهُ بِالْجَنَّةِ مَعَ بَلوى تُصِيبُهُ فَجِئْتُ فَقُلْتُ ادْخُلَ وَيُبَشِرُكَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْجَنَّةِ مَعَ بَلُوى تُصِيبُكَ فَدَخَلَ فَوَجَدَ الْقُفْ قَدْ مُلِئَ فَجَلَسَ وِجَاهَهُمْ مِنَ الشق الآخَرِ قَالَ سَعِيدُ بْنُ الْمُسَيِّبِ فَأَوَلْتُهَا قُبُورَهُمْ- متفق عليه . وَزَادَ فِي رِوَايَةٍ وَأَمَرَنِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بحفظ الْبَابِ وَفِيهَا أَن عُثمَانَ حِينَ بَشَرَهُ حَمدَ اللهَ تَعَالَى ثُمَّ قَالَ اللهُ الْمُسْتَعَانُ .


৭০৯। আবু মূসা আল আশ'আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নিজের ঘরে উযু করে বেরিয়ে পড়লেন এবং বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংগ নেব এবং আমার পুরা দিনটি তাঁর সাথেই কাটাব। তিনি মসজিদে এসে সেখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। সাহাবীগণ ইশারায় বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওদিকে গেছেন।

আবু মূসা (রাঃ) বলেন, আমি তাঁর পদচিহ্ন অনুসরণ করে রওনা করলাম এবং তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে করতে সামনে অগ্রসর হলাম। ততক্ষণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বীরে আরীসে (একটি কূপের নাম) প্রবেশ করেছেন। আমি দরজার কাছে বসে পড়লাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের প্রয়োজন সেরে উযু করলেন। আমি উঠে তাঁর দিকে গিয়ে দেখি তিনি আরীস কূপের উপর বসা। তিনি কূপের চত্বরে তাঁর উভয় হাঁটুর নিম্নদেশ অনাবৃত করে পা দু'টি কূপের মধ্যে ঝুলিয়ে দিয়ে বসে রয়েছেন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম, তারপর ফিরে এসে দরজায় বসে পড়লাম। আমি মনে মনে বললাম, আজ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বাররক্ষী হব। 

এমন সময় আবু বাক্কর (রাঃ) এসে দরজায় টোকা দিলেন। আমি বললাম, কে? তিনি বলেন, (আমি) আবু বাক্। আমি বললাম, থামুন। আমি গিয়ে বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! এই যে আবু বাক্ আপনার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বলেন: তাকে অনুমতি দাও, সেই সাথে তাকে জান্নাতের সুসংবাদও জানিয়ে দাও। আমি ফিরে এসে আবু বাক্রকে বললাম, আসুন, আর হাঁ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন। 

আবু বাক্কর (রাঃ) প্রবেশ করলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাঁর ডান পাশে বসে পড়লেন। তিনিও তার উভয় হাঁটুর নিম্নদেশ অনাবৃত করে কূপের গহ্বরে পা-দু'টি ঝুলিয়ে দিলেন, যেরূপ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন। আমি ফিরে এসে বসে পড়লাম। আমি আমার ভাইকে ছেড়ে এসেছিলাম, তিনি তখন উযু করছিলেন এবং আমার পরপরই তার আসার কথা ছিল। আমি মনে মনে বললাম, যদি আল্লাহ তার মংগল চান তাহলে এ মুহূর্তে তাকে নিয়ে আসবেন। এমন সময় কে যেন দরজা নাড়া দিল। আমি বললাম, কে? আগন্তুক বললেন, উমার ইবনুল খাত্তাব। আমি বললাম, থামুন। 

অতঃপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে তাঁকে সালাম জানালাম এবং বললাম, এই যে উমার আপনার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বলেন: তাকে অনুমতি দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ শুনিয়ে দাও। আমি উমারের নিকট এসে বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে অনুমতি দিয়েছেন এবং আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ জানাচ্ছেন। উমার (রাঃ) প্রবেশ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাম পাশে বসলেন। তিনিও কূপের চত্বরে বসে কূপের ভেতর পা-দু'টি ঝুলিয়ে দিলেন। 

আমি ফিরে এসে বসে পড়লাম আর মনে মনে বললাম, আল্লাহ যদি অমুকের অর্থাৎ তার ভাইয়ের কল্যাণ চান, তাহলে তাকে পাঠিয়েই দেবেন। এমন সময় এক লোক এসে দরজা নাড়া দিল। আমি বললাম, কে? তিনি বলেন, উসমান ইবনে আফফান। আমি বললাম, থামুন। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে তাঁকে উসমানের সংবাদ দিলাম। 

তিনি বলেনঃ তাকে অনুমতি দাও এবং কিছু বিপদ-মুসিবাতের সাথে জান্নাতেরও সুসংবাদ দাও। আমি এসে বললাম, ভেতরে আসুন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে কিছু বিপদ-মুসিবাতের সাথে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন। তিনিও প্রবেশ করলেন। তিনি দেখলেন চত্বর পূর্ণ হয়ে গেছে। তিনি অপর অংশের সামনের দিকে বসে পড়লেন। সাঈদ ইবনুল মুসায়্যাব (রাঃ) বলেন, তিন জনের এক জায়গায় বসার তাৎপর্য হলঃ তাঁদের কবর একই জায়গায় হবে, এটা ছিল তারই ইংগিত।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। অপর এক রিওয়ায়াতে আরো আছেঃ আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বার রক্ষণাবেক্ষণের নির্দেশ দিলেন। তাতে এও রয়েছেঃ উসমানকে সুসংবাদ দেয়া হলে তিনি মহান আল্লাহ্র শুকরিয়া আদায় করলেন এবং বললেন, আল্লাহ মদদগার ও সাহায্যকারী।

۷۱۰- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كُنَّا قُعُودًا حَوْلَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَعَنَا أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ فِي نَفَرٍ فَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ بَيْنِ أَظْهُرِنَا فَابْطَأَ عَلَيْنَا وَخَشِيْنَا أَنْ يُقْتَطَعَ دُونَنَا وَفَزِعْنَا فَقُمْنَا فكنتُ أوَّلَ مَنْ فَزِعَ فَخَرَجْتُ ابْتَغِي رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى أَتَيْتُ

حَائِطا لِلْأَنْصَارِ لِبَنِي النَّجَارِ قَدَّرْتُ بِهِ هَل أَجِدُ لَهُ بَابًا فَلَمْ أَجِدْ فَإِذَا رَبيع يَدْخُلُ فِي جَوْفِ حَائِط مِنْ بِشَرِ خَارِجَهُ وَالرِّبِيعُ الجَدُولُ الصَّغِيرُ فَاحْتَفَرُ فَدَخَلْتُ عَلَى رَسُول الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ فَقُلْتُ نَعَمْ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ مَا شَانُكَ قُلْتُ كُنتَ بَيْنَ أَظْهُرِنَا فَقُمْتَ فَابْطَأتَ عَلَيْنَا فَخَشِيْنَا أن تُقتَطعَ دُونَنَا فَفَزِعْنَا فَكُنْتُ أَوَّلَ مَنْ فَزِعَ فَأَتَيْتُ هَذَا الْحَائِطَ فَاحْتَفَرْتُ كَمَا يَحْتَفِرُ النُّعْلَبُ وَهُؤُلاَءِ النَّاسُ وَرَائِي فَقَالَ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ وَأَعْطَانِي نَعْلَيْهِ فَقَالَ اذْهَبُ بِتَعْلَى هَاتَيْنِ فَمَنْ لقيت من وراء هذا الحائط يَشْهَدُ أَنْ لا اله الا الله مُسْتَيْقِنًا بِهَا قَلْبُهُ فَبَشِّرُهُ بِالْجَنَّةِ وَذَكَرَ الْحَدِيثَ بِطُولِهِ- رواه مسلم.


৭১০। আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চারপাশে বসা ছিলাম। আবু বাক্ ও উমার (রাঃ) আমাদের সাথে একই মজলিসে বসা ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে থেকে উঠলেন এবং বাইরে চলে গেলেন। আমাদের নিকট তাঁর ফিরতে বেশ বিলম্ব হল। আমাদের আশংকা হল, আমাদের অনুপস্থিতিতে তাঁর কোন বিপদ ঘটে না যায়। আমরা ঘাবড়ে গেলাম এবং সবাই উঠে পড়লাম। আমিই প্রথম ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।

আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসন্ধানে বেরিয়ে পড়লাম। খুঁজতে খুঁজতে আমি বনী নাজ্জারের এক আনসারীর বাগানের বেষ্টনীর নিকট এসে পৌঁছলাম। দরজার সন্ধানে আমি তার চতুর্দিকে ঘুরলাম, কিন্তু কোন দরজা পেলাম না। একটি ক্ষুদ্র নালা আমার চোখে পড়ল, যেটি বাইরের একটি কূপ থেকে বাগানের মধ্যে চলে গেছে। 

আমি সংকুচিত হলাম এবং (ঐ নালার মধ্য দিয়ে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গিয়ে হাযির হলাম। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আবু হুরাইরা? আমি বললাম, হাঁ হে আল্লাহ্র রাসুল। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তা কী খবর তোমার? আমি বললাম, আপনি আমাদের সাথে ছিলেন, অতঃপর সেখান থেকে উঠে চলে এলেন। আমাদের নিকট ফিরতে আপনার দেরি হতে থাকে। আমরা শংকিত হলাম যে, পাছে আমাদের অনুপস্থিতিতে আপনার কোন বিপদ ঘটে না যায়। আমরা তাই ঘাবড়ে গেলাম এবং আমিই সবার আগে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। আমি এ বাগানের বেষ্টনী পর্যন্ত এসে পৌঁছলাম। আমি সংকুচিত হলাম, যেরূপ শৃগাল সংকুচিত হয়, তারপর বাগানে ঢুকলাম। অবশিষ্ট লোক আমার পেছনে রয়েছে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জুতা জোড়া আমাকে দিয়ে বলেন: হে আবু হুরাইরা! আমার জুতা জোড়া নিয়ে যাও। এ বাগানের বাইরে গিয়ে যার সাথেই তোমার সাক্ষাত হবে সে যদি সাচ্চা দিলে 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই) একথার সাক্ষ্য দেয়, তাহলে তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। এরপর পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন। (মুসলিম)

۷۱ - وَعَنِ ابْنِ سُمَاسَةَ قَالَ حَضَرْنَا عَمْرَو بْنَ الْعَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ وَهُوَ فِي سِيَاقَةِ الْمَوْتِ فَبَكَى طَوِيلاً وَحَولَ وَجْهَهُ إِلَى الْجِدَارِ فَجَعَلَ ابْنُهُ يَقُولُ يَا أَبْتَاهُ أمَا بَشركَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بكَذا ؟ أمَا بَشْرَكَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بكَذا ؟ فَأَقْبَلَ بوجهه فَقَالَ انْ أفْضَلَ مَا تُعدُّ شَهَادَةُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلا الله وأن محمداً رَسُولُ اللهِ إِنّى قَدْ كُنتُ عَلى أطباق ثَلَاثَ لَقَدْ رَأَيْتُنِي وَمَا أَحَدٌ أَشَدَّ بُعْضًا لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنِّي وَلَا أَحَبٌ إِلَى مِنْ أَنْ أَكُونَ قَدِ اسْتَمْكَنْتُ مِنْهُ فَقَتَلْتُهُ فَلَوْ مُتْ عَلَى تِلْكَ الْحَالِ لَكُنْتُ مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَلَمَّا جَعَلَ اللهُ الْإِسْلامَ فِي قَلْبِي أَتَيْتُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ ابْسُطُ يَمِينَكَ فَلأُبا يعكَ فَبَسَطَ يَمِيْنَهُ فَقَبَضْتُ يَدِى فَقَالَ مَا لَكَ يَا عَمْرُو قُلْتُ أَرَدْتُ أنْ أَشْتَرِط قَالَ تَشْتَرِطُ مَاذَا ؟ قُلْتُ أنْ يُغفَرَ لِى قَالَ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ الْإِسْلَامَ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ وَأَنْ الْهِجْرَةَ تَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهَا وَأَنَّ الْحَجِّ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ وَمَا كَانَ أَحَدٌ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا أَجَلَّ فِي عَيْنِي مِنْهُ وَمَا كُنتُ أطيق أَنْ أَمْلَا عَيْنِى مِنْهُ اجْلاَلاً لَهُ وَلَوْ سُئِلْتُ أَنْ أَصِفَهُ مَا أَطَقْتُ لِأَنِّي لَمْ أكُنْ أَمْلَأُ عَيْنى مِنْهُ وَلَوْ مُتَّ عَلى تلك الحال لرجَوْتُ أَنْ أَكُونَ مِنْ أهل الْجَنَّةِ ثُمَّ وَلِيْنَا أَشْيَاءَ مَا أدْرِى مَا حَالِى فِيهَا ؟ فَإِذَا أَنَا مُتْ فَلَا تَصْحَبَنِي نَائِحَةُ وَلَا نَارٌ فَإِذَا دَفَتَتُمُونِى فَشُنُّوا عَلَى التُّرَابَ شَنَّا ثُمَّ أَقِيمُوا حَوْلَ قَبْرِى قَدرَ مَا تُنْحَرُ جَزَوْرٌ وَيُقَسَمُ لَحْمُهَا حَتَّى اسْتَانِسَ بِكُمْ وَأَنْظُرَ مَا أَرَاجِعُ بِهِ رُسُلَ ربي - رواه مسلم.


৭১১। ইবনে শুমাসা (রাঃ) থেকে বরণিত। তিনি বলেন, আমরা ইবনে আস (রাঃ) এর নিকট হাযির হলাম। তিনি ছিলেন তখন মুমূর্ষু অবস্থায় মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতর। তিনি বহুক্ষণ কাঁদলেন এবং তাঁর চেহারা দেয়ালের দিকে ফিরিয়ে নিলেন। তাঁর পুত্র তাঁর উদ্দেশে বলতে লাগলেন, আব্বাজান! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আপনাকে এরূপ সুসংবাদ দেননি? 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আপনাকে এরূপ সুসংবাদ দেননি? অতঃপর তিনি মুখ ফিরিয়ে বলেন, আমাদের জন্য সর্বোত্তম পুঁজি হল: 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ' (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্র রাসূল) একথার সাক্ষ্যদান। বস্তুত জীবনে আমি তিন তিনটি পর্যায় অতিক্রম করেছি। আমার জীবনের এমন একটি পর্যায়ও ছিল যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাইতে আর কারো প্রতি আমার এতো বেশি কঠোর বিদ্বেষ ও শত্রুতা ছিল না এবং সুযোগমত পেলে তাঁকে হত্যা করার চাইতে বেশি প্রিয় আর কিছু আমার নিকট ছিল না। 

ঐ অবস্থায় যদি আমার মৃত্যু হয়ে যেত, তাহলে আমি নিশ্চিত জাহান্নামী হতাম। আল্লাহ যখন আমার অন্তরে ইসলামের আকর্ষণ জাগ্রত করে দিলেন তখন আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বললাম, আপনার ডান হাত বাড়িয়ে দিন, আমি অবশ্যই আপনার নিকট বাইআত গ্রহণ করতে চাই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান হাত দরায করে দিলেন। আমি আমার হাত গুটিয়ে নিলাম। 

তিনি বলেন: কী ব্যাপার, হে আমর? আমি বললাম, আমি একটি শর্ত করতে চাই। তিনি বলেন: তা কী শর্ত করতে চাও তুমি? আমি বললাম, আমাকে যেন ক্ষমা করে দেয়া হয়। তিনি বলেন: তোমার কি জানা নেই যে, ইসলাম তার পূর্বেকার যাবতীয় গুনাহ মিটিয়ে দেয়, হিজরাত তার পূর্বেকার সকল গুনাহকে ধ্বংস করে দেয় এবং হজ্জ তার পূর্বেকার যাবতীয় গুনাহ বিলীন করে দেয়? (যাই হোক, এরপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বাইআত গ্রহণ করলাম)। 

তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাইতে অধিক প্রিয় আমার নিকট আর কেউ রইল না। আমার চোখে তাঁর চাইতে মর্যাদাবানও আর কেউ থাকল না। তাঁর অপরিসীম মর্যাদা-গাম্ভীর্যের দরুন আমি পূর্ণ দৃষ্টিতে তাঁর প্রতি তাকাতে পর্যন্ত পারতাম না। ফলে আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আকৃতি-বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে, তার বর্ণনা দিতেও আমি অক্ষম। কারণ আমি পূর্ণ দৃষ্টিতে কখনো তাঁর দিকে তাকাইনি। এ অবস্থায় যদি আমার মৃত্যু হয়ে যেত, তবে আমার জান্নাতী হবার নিশ্চিত আশা ছিল। 

এরপর আমাদের অনেক যিম্মাদারি মাথায় নিতে হয়। জানি না, সেসব ব্যাপারে আমার অবস্থা কী দাঁড়ায়? যাই হোক, আমি মৃত্যুবরণ করলে আমার জানাযায় যেন কোন বিলাপকারিণীও না থাকে এবং মশাল মিছিলও না হয়। তোমরা আমাকে যখন দাফন করবে, আমার কবরে অল্প অল্প করে মাটি ফেলবে, এরপর আমার কবরের চারপাশে এতটুকু সময় অবস্থান করবে, যে সময়ের মধ্যে উট যবাই করে তার গোশ্ত বণ্টন করা যায়, যাতে আমি তোমাদের ভালোবাসা ও সান্নিধ্য লাভ করতে পারি এবং দেখি আমার প্রভুর দূতগণের সাথে কি ধরনের বাক্য বিনিময় করি। (মুসলিম)

উত্তম কর্মের জন্য সুসংবাদ ও মুবারকবাদ দেয়া ৷
#মুহাম্মদের_বাণী #ইসলামিক_একাডেমি_এনপি #হে_মুমিনগণ! #ইবনে_মাজাহ  #হাদীস_বিশ্ব_নবীর_বাণী  #সুনানে_ইবনে_মাজাহ #রিয়াদুস_সালেহীন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
3/related/default