قَالَ اللهُ تَعَالَى : وأَوْفُوا بِالْعَهْدِ إِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْئُولاً.
মহান আল্লাহ বলেন :
“তোমরা প্রতিশ্রুতি পূর্ণ কর। নিশ্চয় প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” (সূরা বনী ইসরাঈল: ৩৪)
٦٨٥ - عَنْ أَبِي سَعِيدِ الْخُدْرِي رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنْ مِنْ أَشَرِّ النَّاسِ عِنْدَ اللَّهِ مَنْزِلَةَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الرِّجُلُ يُقْضِي إِلَى الْمَرْأَةِ وَتُقْضِي إِلَيْهِ ثُمَّ يَنْشُرُ سِرِّهَا - رواه مسلم.
৬৮৫। আবু সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কিয়ামাতের দিন আল্লাহ্র নিকট মর্যাদার দিক থেকে নিকৃষ্টতম হবে ঐ ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর সাথে শয্যা গ্রহণ করে এবং তার স্ত্রীও তার সাথে শয্যা গ্রহণ করে, তারপর তাদের পরস্পরের মিলন ও সহবাসের গোপন কথা লোকদের নিকট প্রকাশ করে। অর্থাৎ সহবাস পূর্ব অবস্থা, সহবাসকালীন বিষয়াদি ও তার পরের কথাবার্তা ইত্যাদি অন্যের নিকট বলে দেয় । বস্তুত এররূপ গর্হিত কাজ কবীরা গুনাহ্র অন্তর্ভুক্ত । (মুসলিম)
٦٨٦ - وَعَنْ عَبْدِ الله بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ حِيْنَ تَايْمَتُ بنْتُهُ حَفْصَةٌ قَالَ لَقَيْتُ عُثمَانَ بْنَ عَفَّانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ فَعَرَضْتُ عَلَيْهِ حَفْصَةَ فَقُلْتُ أن شنت أنْكَحْتُكَ حَفْصَةَ بنت عُمَرَ قَالَ سَانْظُرُ فِي أَمْرِي فَلَبِثْتُ لَيَالِي ثُمَّ لَقِيَنِى فَقَالَ قَدْ بَدَا لِى أَنْ لا أَتَزَوْجَ يَوْمِي هَذَا فَلَقِيتُ أَبَا بَكْرِ الصَّدِّيقَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ فَقُلْتُ إِن شئتَ انْكَحْتُكَ حَفْصَةَ بِنْتَ عُمَرَ فَصَمَتَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ فَلَمْ يَرْجِعُ إِلَى شَيْئًا فَكُنْتُ عَلَيْهِ أَوْجَدَ مِنِّى عَلَى عُثْمَانَ فَلَبِثْتُ لَيَالِي ثُمَّ خَطَبَهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَانْكَحْتُهَا إِيَّاهُ فَلَقِيَنِي أَبُو بَكْرٍ فَقَالَ لَعَلَّكَ وَجَدْتَ عَلَى حِيْنَ عَرَضْتَ عَلَى حَفْصَةَ فَلَمُ ارْجِعُ إِلَيْكَ شَيْئًا فَقُلْتُ نَعَمْ قَالَ فَإِنَّهُ لَمْ يَمْنَعْنِي أَنْ أَرْجِعْ إِلَيْكَ فِيمَا عَرَضْتَ عَلَى إِلَّا أَنَّى كُنْتُ عَلِمْتُ أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَكَرَهَا فَلَمْ أَكُنْ لِأُنْشِيَ سِرِّ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَوْ تَرَكَهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَقَبِلْتُها - رواه البخاري.
৬৮৬। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমর (রাঃ) এর কন্যা হাফসা (রাঃ) বিধবা হওয়ার পর তিনি (উমার) বলেন, আমি উসমান ইবনে আফ্ফানের সাথে সাক্ষাত করলাম। তাঁর সাথে হাফসার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করলাম এবং বললাম, যদি আপনি চান তাহলে উমারের কন্যা হাফসাকে আপনার নিকট বিবাহ দিই। উসমান (রাঃ) বললেন আচ্ছা, আমি এই ব্যেপারে ভেবে দেখেছি। উমর (রাঃ) বলেন, আমি আবু বাকর আস্ সিদ্দীক (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাত করলাম। তাকে বললাম, আপনি যদি চান তাহলে উমারের কন্যা হাফসাকে আপনার সাথে বিবাহ দিই। আবু বাক্ (রাঃ) নীরব রইলেন, আমাকে কোন জবাব দিলেন না। উসমানের জওয়াবের চাইতে আবু বারের এ আচরণে আমি নিজেকে বেশি আহত বোধ করলাম।
কয়েক দিন অপেক্ষা করার পর অবশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাফসাকে বিবাহ করার পয়গাম পাঠান। আমি তাঁর সাথেই হাফসার বিয়ে সম্পন্ন করলাম। এরপর আবু বাক্ (রাঃ) আমার সাথে সাক্ষাতকালে বলেন, সম্ভবত সেদিন আমার তরফ থেকে আপনি ব্যথা পেয়েছেন, যেদিন আপনি হাফসাকে বিয়ে করার জন্য আমার কাছে প্রস্তাব পেশ করেছিলেন, আমি তার কোন জবাব দিইনি।
আমি বললাম, হাঁ। আবু বাক্ (রাঃ) বলেন, আপনি হাফসাকে আমার জন্য পেশ করার পর তার জবাব দেয়ার পথে একমাত্র প্রতিবন্ধক এটাই ছিল যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম তার বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন এবং তা আমার জানা ছিল। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ গোপন বিষয়টি প্রকাশ করতে চাচ্ছিলাম না। অবশ্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি তাকে গ্রহণ না করতেন, তাহলে অবশ্যই আমি তাকে কবুল করতাম। (বুখারী)
٦٨٧ - وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كُنْ أَزْوَاجُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ : وَسَلَّمَ عِندَهُ فَأَقْبَلَتْ فَاطِمَةُ تَمْشِي مَا تَخْطِئُ مِشْيَتَهَا مِنْ مِشْيَةٍ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَيْئًا فَلَمَّا رَأهَا رَحْبَ بهَا وَقَالَ مَرْحَبًا بِابْنَتِي ثُمَّ أَجْلَسَهَا عَنْ يَمِينِهِ أَوْ عَنْ شمَالِهِ ثُمَّ سَارُهَا فَبَكَتْ بُكَاءً شَديدا فَلَمَّا رَأَى جَزَعَهَا سَارُهَا الثانية فَضَحِكَتْ فَقُلْتُ لَهَا خَصْكِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ بَيْنِ نسائه بالسرار ثُمَّ انْت تَبْكَيْنَ؟ فَلَمَّا قَامَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سالتهَا مَا قَالَ لَكِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَتْ مَا كُنْتُ لِأَفْشِيَ عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سِرِّهُ فَلَمَّا تُونِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُلْتُ عَزَمْتُ عَلَيْكَ بِمَا لِى عَلَيْكَ مِنَ الْحَقِّ لَمَا حَدَّثَتِنِي مَا قَالَ لَكِ رَسُولُ الله صَلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ أما الآنَ فَنَعَمُ أَمَّا حِيْنَ سَارِنِي فِي المرة الأولى فَأَخْبَرَنِي أَنَّ جِبْرِيلَ كَانَ يُعَارِضُهُ الْقُرْآنَ فِي كُلِّ سَنَةٍ مَرَّةً أَوْ مَرَّتَيْنِ وَأَنَّهُ عَارَضَهُ الْآنَ مَرَّتَيْنِ وَأَنِّي لا أَرَى الْأَجَلَ الأ قد اقْتَرَبَ فَاتَّقِي اللَّهَ وَاصْبِرِي فَإِنَّهُ نِعْمَ السَّلَفُ أَنَا لَكِ فَبَكَيْتُ بُكَائِى الَّذِي رَأَيْتِ فَلَمَّا رَأَى جَزَعِي سَارِنِي الثَّانِيَةَ فَقَالَ يَا فَاطِمَةُ أَمَا تَرْضَيْنَ أَنْ تَكُونِى سَيِّدَةَ نِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ أَوْ سَيِّدَةَ نساء هذه الأمة فَضَحكت ضحكي الذي رأيت متفق عليه وهذا لفظ مسلم .
৬৮৭। আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সকল স্ত্রী তাঁর নিকটেই ছিলেন। এমন সময় ফাতিমা (রাঃ) হাঁটতে হাঁটতে সেখানে এসে উপস্থিত। বলা বাহুল্য ফাতিমার চলার ভঙ্গি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চলার ভঙ্গির অনুরূপ ছিল। ফাতিমাকে দেখে তিনি (তার বসার জন্য) জায়গা প্রশস্ত করে দিলেন এবং বললেন: খোশ আমদেদ, হে স্নেহের কন্যা। তিনি তাকে নিজের ডানে বা বামে বসালেন, তারপর চুপি চুপি তাকে কিছু একটা বললেন। এতে ফাতিমা (রাঃ) ভীষণভাবে কাঁদলেন। তার পেরেশানী লক্ষ্য করে নবী (সাঃ) দ্বিতীয়বার চুপি চুপি তাকে কী যেন বললেন। এবার ফাতিমা হাসলেন।
তখন আমি তাকে বললাম, রাসূল (সাঃ) তাঁর স্ত্রীদের সামনে একমাত্র তোমাকে চুপি চুপি কিছু বললেন তারপরও তুমি কাঁদলে? অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মজলিস থেকে উঠে গেলে আমি ফাতিমাকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার নিকট কী বলেছিলেন? ফাতিমা বলেন, দেখুন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গোপন কথা প্রকাশ করতে চাই না। অবশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইনতিকাল করলে আমি ফাতিমাকে বললাম, তোমার উপর আমার যে হক রয়েছে আমি সেই হকের দোহাই দিয়ে বলছিঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে কী বলেছিলেন, তা আমার কাছে বর্ণনা কর। ফাতিমা বলেন : হাঁ, এখন তাহলে বলছি।
প্রথমবারে তিনি আমার কাছে চুপি চুপি যা বলেছিলেন : জিবরীল (আঃ) গোটা বছরে আমার কাছে আল কুরআন একবার বা দু'বার (আদ্যোপান্ত) পেশ করতেন, কিন্তু এবার তিনি একই সময়ে দু'বার পেশ করেন। তাই আমার মনে হচ্ছে আমার আয়ু ফুরিয়ে এসেছে, মৃত্যু আমার নিকটবর্তী। কাজেই আল্লাহকে ভয় কর, সবর ইখতিয়ার কর, আমি তোমার জন্য উত্তম পূর্বসূরী।
একথা শুনে আমি কাঁদতে লাগলাম যা আপনি দেখতে পেয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পেরেশানী লক্ষ্য করে দ্বিতীয়বার আমার কাছে চুপি চুপি বললেন: হে ফাতিমা! তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তুমিই হবে সকল মুমিন মেয়েদের নেত্রী বা এ উম্মাতের নারীকুলের নেত্রী? এ কথা শুনে আমি হাসলাম, যা আপনি দেখেছেন।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। হাদীসের মূল পাঠ মুসলিম থেকে গৃহীত
٦٨٨ - عَنْ ثَابِتِ عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ أَتَى عَلَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنَا الْعَبُ مَعَ الْعُلْمَانِ فَسَلَّمَ عَلَيْنَا فَبَعَثَنِي فِي حَاجَةٍ فَابْطَأْتُ عَلَى أمِّى فَلَمَّا جِئْتُ قَالَتْ مَا حَبَسَكَ فَقُلْتُ بَعَثَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لحاجة قَالَتْ مَا حَاجَتُهُ قُلْتُ إِنَّهَا سِرَّ قَالَتْ لَا تُخْبِرَنَّ بِسِرِّ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ لِحَاجَةٍ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحَدًا قَالَ أَنَسٌ وَاللهِ لَوْ حَدَّثْتُ بِهِ أَحَدًا لَحَدِّثْتُكَ بِهِ يَا ثَابِتُ - رواه مسلم وروى البخاري بَعْضَهُ مُختصرا
৬৮৮। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এলেন। আমি তখন ছেলেদের সাথে খেলছিলাম। তিনি আমাদের বালকদের সালাম দিলেন এবং আমাকে তাঁর এক প্রয়োজনে পাঠালেন। (এর ফলে) আমার মায়ের নিকট ফিরে যেতে আমার দেরি হলো।
আমি আমার মায়ের নিকট ফিরে এলে তিনি বলেন, তোমাকে কিসে আটকে রেখেছিল? আমি বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাঁর এক কাজে পাঠিয়েছিলেন। তিনি বলেন, তাঁর কী কাজ ছিল? আমি বললাম, সেটা গোপন বিষয়। আমার মা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গোপন বিষয় সম্পর্কে কাউকে যেন অবহিত না কর।
আনাস (রাঃ) বলেন, হে সাবিত, আল্লাহ্ শপথ! আমি যদি উক্ত বিষয় সম্পর্কে কাউকে বলতাম, তাহলে তোমাকে অবশ্যই বলতাম। ইমাম মুসলিম এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম বুখারী এর কিছু কিছু অংশ সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন।
#মুহাম্মদের_বাণী #ইসলামিক_একাডেমি_এনপি #হে_মুমিনগণ! #ইবনে_মাজাহ #হাদীস_বিশ্ব_নবীর_বাণী #সুনানে_ইবনে_মাজাহ #রিয়াদুস_সালেহীন
