ইমাম নববী (রাঃ) বলেন, নিম্নোক্ত কাজগুলো ডান হাতে বা ডান দিক থেকে শুরু করা ভালো। যেমন উযু করা, গোসল করা, কাপড় পরা, জুতা, মোযা ও পাজামা ইত্যাদি পরা, মসজিদে প্রবেশ করা, মিসওয়াক করা, সুরমা লাগানো, নখ কাটা, গোঁফ ছাঁটা, বগল পরিষ্কার করা, মাথা মুড়ানো, নামাযে সালাম ফেরানো, পানাহার করা, মুসাফাহা করা, হাজরে আসওয়াদে চুমো খাওয়া, পায়খানা থেকে বের হওয়া, উপহার সামগ্রী গ্রহণ করা এবং এ জাতীয় অন্যান্য যাবতীয় কাজ। পক্ষান্তরে নিম্নোক্ত কাজগুলো বাম হাতে বা বাম দিক থেকে শুরু করা বাঞ্ছনীয়। যেমন নাক পরিষ্কার করা, থুথু ফেলা, পায়খানায় প্রবেশ করা, মসজিদ থেকে বের হওয়া, মোযা, জুতা, কাপড় ও পাজামা খোলা, শৌচ করা এবং এ জাতীয় অন্যান্য সকল তুচ্ছ কাজ।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ فَيَقُولُ هَاؤُمُ اقْرَوْا كِتَابِيَة.
মহান আল্লাহ বলেন:
“যাকে তার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে সে (আনন্দে পাশের লোকদেরকে) বলবে, নাও আমার আমলনামা পড়ে দেখ।” (সূরা আল হাক্কাহ: ১৯)
وَقَالَ تَعَالَى : فَأَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ مَا أَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ. وَأَصْحَابُ الْمَشْتَمَة مَا أَصْحَابُ الْمَشْئَمَة.
“ডান দিকের দল; কতই ভাগ্যবান ডান দিকের দল। আর বাম দিকের দল; কতই হতভাগ্য বাম দিকের দল।” (সূরা আল ওয়াকিয়াঃ ৮-৯)
তাতে সূরা আল কাফিরূন ও সূরা আল ইখলাস পড়ার বিষয় উল্লেখিত হয়েছে, তবে কোন বিশেষ সূরা নির্দিষ্ট করা জরুরী নয়। দিন রাতের তিনটি নিষিদ্ধ সময় ছাড়া যে কোন সময়ই ইস্তিখারা করা যায়। ইস্তিখারার সুফল অনস্বীকার্য। ইস্তিখারার দ্বারা প্রকাশ্যে, ইংগিতে বা স্বপ্নযোগে কোন নির্দেশ লাভ অপরিহার্য নয়। যথানিয়মে ইস্তিখারা করে মনের ঝোঁক অনুযায়ী যে কোন মুবাহ ও ভালো কাজে অগ্রসর হওয়াই যথেষ্ট। এতে আল্লাহ্র সাহায্য ও রহমত পাওয়া যায় এবং কাজে সুফল অর্জিত হয়।
۷۲۱- وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعْجِبُهُ التَّيَمُّنُ فِي شَانِهِ فِي ظُهُورِهِ وَتَرَجُله وتنعله متفق عليه.
৭২১। আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সকল (উত্তম) কাজ ডান থেকে শুরু করা পছন্দ করতেন, যেমন: উযু, চুল-দাড়ি আঁচড়ানো ও জুতা পরা। (বুখারী, মুসলিম)
۷۲۲- وَعَنْهَا قَالَتْ كَانَتْ يَدُ رَسُول الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اليُمْنَى لِطَهُوره وَطَعَامِهِ وَكَانَتِ الْيُسْرَى لِخَلَاتِهِ وَمَا كَانَ مِنْ أَذًى حَدِيثُ صَحِيحٌ رَوَاهُ أَبُو داود و غیره باسناد صحيح
৭২২। আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ডান হাত পবিত্রতা অর্জন ও খাবার গ্রহণে ব্যবহৃত হত এবং বাম হাতের ব্যবহার হত শৌচ ও নাপাক জাতীয় তুচ্ছ কাজে হাদীসটি সহীহ।
এটি ইমাম আবু দাউদ প্রমুখ সহীহ সনদে রিওয়ায়াত করেছেন।
۷۲۳- وَعَنْ أَمْ عَطِيَّةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَهُنَّ فِي غُسلِ اِبْنَتِهِ زَيْنَبَ ابْدَأْنَ بِمَيَامِنِهَا وَمَوَاضِعِ الْوُضُوءِ مِنْهَا - متفق عليه
৭২৩। উম্মু আতিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কন্যা যায়নাব (রা)-কে গোসল দেয়ার সময় গোসল দানকারিণীদের বলেনঃ তার ডান দিক থেকে এবং উযুর অংগসমূহ থেকে গোসল দেয়া শুরু কর। (বুখারী, মুসলিম)
٧٢٤ - وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذا انْتَعَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَبْدَأُ بِالْيُمنى وإِذَا نَزَعَ فَلْيَبْدَأُ بِالشِّمَالِ لِتَكْنِ الْيُمْنَى أولهما تُنْعَلُ وأَخرَهُمَا تُنْزَعُ متفق عليه.
৭২৪। আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের কেউ যখন জুতা পরে তখন ডান পা থেকে যেন শুরু করে এবং জুতা খুলতে চাইলে যেন বাম পা থেকে খোলা শুরু করে, যাতে জুতা পরতে ডান পা প্রথম এবং খুলতে শেষে হয়। (বুখারী, মুসলিম)
٧٢٥ - وَعَنْ حَفْصَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنْ رَسُولَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَجْعَلُ يَمِيْنَهُ لِطَعَامِهِ وَشَرَابِهِ وَثِيَابِهِ وَيَجْعَلُ يَسَارَهُ لِمَا سِوَى ذَلِكَ- رواه أبو داود والترمذي وغيره.
৭২৫। হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদ্য গ্রহণ, পানি পান ও পোশাক পরিধানে তাঁর ডান হাত ব্যবহার করতেন, এছাড়া অন্যান্য কাজে তাঁর বাম হাত ব্যবহার করতেন।
ইমাম আবু দাউদ, ইমাম তিরমিযী প্রমুখ এটি রিওয়ায়াত করেছেন।
٧٢٦ - وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إذا لَبِسْتُمْ وَإِذا تَوَضَّأْتُمْ فَابْدَؤُا بِآيَامِنكُمْ - حَدِيث صَحِيح رواه أبو داود والترمذي بإسناد صحيح .
৭২৬। আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যখন পোশাক পরবে ও উযু করবে, তখন ডান দিক থেকে শুরু করবে। এটি সহীহ হাদীস, ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী সহীহ সনদে তা রিওয়ায়াত করেছেন।
۷۲۷- وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَتَى مِنِّي فَأَتَى الْجَمْرَةَ فَرَمَاهَا ثُمَّ أَتَى مَنْزِلَهُ بِمِنِّى وَنَحَرَ ثُمَّ قَالَ لِلْحَلاقِ خُذُ وَأَشَارَ إِلَى جَانِبِهِ الْأَيْمَنِ ثُمَّ الْأَيْسَرِ ثُمَّ جَعَلَ يُعْطِيهِ النَّاسَ- متفق عليه. وَفِي رِوَايَةٍ لَمَّا رَمَى الْجَمْرَةَ وَنَحَرَ نُسُكَهُ وَحَلَقَ نَاوَلَ الْحَلاقَ شقَّهُ الْأَيْمَنَ فَحَلَقَهُ ثُمَّ دَعَا أَبَا طلْحَةَ الْأَنْصَارِي فَأَعْطَاهُ إِيَّاهُ ثُمَّ نَاوَلَهُ الشَّقِّ الْأَيْسَرَ فَقَالَ احْلِقُ فَحَلَقَهُ فَأَعْطَاهُ أبا طَلْحَةَ فَقَالَ اقْسِمُهُ بَيْنَ النَّاسِ
৭২৭। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনায় এলেন, অতঃপর জামরায় এসে পাথর নিক্ষেপ করলেন, তারপর মিনায় তাঁর অবস্থান স্থলে ফিরে এলেন এবং কুরবানী করলেন। তিনি মাথা মুণ্ডনকারীকে বললেনঃ লও (এখান থেকে শুরু কর), তিনি ডান দিকে ইশারা করলেন, অতঃপর বাম দিকে ইশারা করলেন, তারপর লোকদের মধ্যে চুল বিতরণ করে দিতে লাগলেন।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম এ হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। অন্য এক রিওয়ায়াতে রয়েছে: পাথর নিক্ষেপের পর তিনি কুরবানীর পশু যবেহ করলেন, মাথা মুণ্ডাবার ইচ্ছা করলে ক্ষৌরকারকে মাথার ডান অংশ ইশারায় দেখালেন। সে তা মুণ্ডন শেষ করলে তিনি আবু তালহা আনসারী (রাঃ)-কে ডাকলেন এবং চুলগুলো তাকে দিলেন। তারপর তিনি ক্ষৌরকারকে মাথার বাম দিকে ইশারা করে বলেনঃ (এবারে) এগুলো মুণ্ডিয়ে দাও। সে তা মুণ্ডিয়ে দিল। চুলগুলো রাসূলুল্লাহ আবু তালহাকে দিলেন এবং বললেনঃ এগুলো লোকদের মধ্যে বণ্টন করে দাও।
সকল ভালো কাজে ডান হাত ব্যবহার করা নবী (সাঃ)-এর সুন্নাতের অন্তর্গত যার প্রমাণ সহীহ হাদীসসমূহে সুস্পষ্ট। পানাহারের বেলায় ডান হাতের ব্যবহারের উপর উলামায়ে কিরাম বিশেষ গুরুত্ব দান করেছেন। তারা এতদূর পর্যন্ত বলেছেন: ডান হাতে পানাহার করা ওয়াজিব। যেহেতু বিভিন্ন হাদীসে এর উপর সবিশেষ জোর দেয়া হয়েছে এবং এর উপর আমল না করার জন্য বিশেষ শাস্তিরও সাবধানবাণী উচ্চারিত হয়েছে। কাজেই এসবের প্রেক্ষিতে সুন্নাতে নববীর উপর আমল করা ও এ ব্যাপারে যাতে সীমালংঘিত না হয় সে সম্পর্কে একান্তভাবে সচেতন থাকা অপরিহার্য।
#মুহাম্মদের_বাণী #ইসলামিক_একাডেমি_এনপি #হে_মুমিনগণ! #ইবনে_মাজাহ #হাদীস_বিশ্ব_নবীর_বাণী #সুনানে_ইবনে_মাজাহ #রিয়াদুস_সালেহীন.png)