#রিয়াদুস_সালেহীন ১ম খণ্ড, অনুচ্ছেধঃ ৪৫, সৎকর্মপরায়ণ লোকদের সাথে দেখা-সাক্ষাত করা, তাদের বৈঠকসমূহে অংশগ্রহণ করা, তাদের সংস্পর্শে থাকা, তাদেরকে মহব্বত করা, তাদের সাক্ষাত প্রার্থনা করা, তাদেরকে দিয়ে দোওআ করানো এবং বরকতময় ও মর্যাদা সম্পন্ন স্থানসমূহ যিয়ারত করা।

Muhammads words
0

قَالَ اللهُ تَعَالَى : واذْ قَالَ مُوسَى لِفَتَاهُ لا أَبْرَحُ حَتَّى أَبْلُغَ مَجْمَعَ الْبَحْرَيْنِ أَوْ أمْضِي حُقُبًا إلى قَوْلِهِ تَعَالَى قَالَ لَهُ مُوسَى هَلْ أَتَّبِعُكَ عَلَى أَنْ تُعَلِمَنِ مِمَّا علمت رشد).

মহান আল্লাহ বলেন :

“যখন মূসা তার সফরসংগীকে বলল, দুই নদীর সংঙ্গমস্থলে না পৌছা পর্যন্ত আমি আমার সফর শেষ করব না অথবা আমি যুগ যুগ ধরে চলতে থাকব। তারা দুই সমুদ্রের সঙ্গমস্থলে পৌঁছে নিজেদের মাছের কথা ভুলে গেল। আর তা ছুটে গিয়ে এমনভাবে নদীতে পথ ধরল যেন কোনো সুড়ংগে রয়েছে। আরও সামনে অগ্রসর হয়ে মূসা তার সংগীকে বলল, আমাদের নাশতা পেশ করো। আমাদের এই সফরে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। সংগী বলল, আমরা যখন সেই প্রস্তর খণ্ডে আশ্রয় নিয়েছিলাম, তখন কি ঘটনা ঘটেছিল তা কি আপনি লক্ষ্য করেছেন? মাছের কথা আমি ভুলেই গেছি। আর শয়তান আমাকে এমনভাবে বেখেয়াল করে দিয়েছে যে, আমি তার উল্লেখ করতেও ভুলে গেছি। মাছ তো আশ্চর্যরকমভাবে তার পথ ধরে নদীতে চলে গেছে। মূসা বলল, আমরা তো ওটাই চাচ্ছিলাম । অতঃপর তারা দু'জন নিজেদের পায়ের চিহ্ন ধরে পুনরায় ফিরে আসলো। আর সেখানে তারা আমার বান্দাদের মধ্য থেকে একজন বান্দাকে পেল। তাকে আমরা আপন রহমত দিয়ে ধন্য করেছিলাম এবং নিজের পক্ষ থেকে তাকে এক বিশেষ জ্ঞানও দান করেছিলাম। মূসা তাকে বলল, আমি কি আপনার সংগে থাকতে পারি, যাতে আপনি আমাকেও সেই জ্ঞান শিক্ষা দেন যা আপনাকে শেখানো হয়েছে?” (সূরা আল-কাহ্ফ :৬০-৬৬)।


وَقَالَ تَعَالَى : واصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِيْنَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ .


“তুমি তোমার দিলকে এসব লোকের সংস্পর্শে স্থিতিশীল রাখ, যারা নিজেদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের সন্ধানে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁকে ডাকে এবং তাদের থেকে কখনও অন্যদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে না।” (সূরা আল-কাহ্ফঃ ২৮)।


٣٦٠ - عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ أَبُو بَكْرِ لِعُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا بَعْدَ وَفَاةِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ انطلق بِنَا إِلَى أَمِّ أَيْمَنَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا تَزُورُهَا كَمَا كَانَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَزُورُهَا فَلَمَّا انْتَهَيَا إِلَيْهَا بَكَتْ فَقَالَا لَهَا مَا يُبْكِيْكِ أَمَا تَعْلَمِيْنَ أَنْ مَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَقَالَتْ إِنِّي لا أَبْكِي أَنِّي لا أَعْلَمُ أَنَّ مَا عِنْدَ اللَّهِ تَعَالَى خَيْرٌ الرَسُول الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَكِنْ ابْكى أنْ الْوَحَى قَدْ انْقَطَعَ مِنَ السَّمَاءِ فَهَيْجَتْهُمَا عَلَى الْبُكَاءِ فَجَعَلا يَبْكَيَانِ مَعَهَا - رواه مسلم.


৩৬০। আনাস (রাদিআল্লা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালের পর আবু বাক্ (রাঃ) উমার (রাঃ)-কে বলেন; আমাদের সাথে উম্মু আইমানের কাছে চলুন। উম্মু আইমান (রাদিআল্লা) শিশুকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লালন-পালন করেছিলেন এবং কৈশোরে তাঁর খিদমত করেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে আযাদ করে যায়িদ ইবনে হারিসার সাথে বিবাহ দেন। তিনি উম্মু আইমানকে অত্যন্ত ভক্তি-শ্রদ্ধা করতেন এবং বলতেন : উম্মু আইমান আমার মায়ের মতো।

 রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যেমন তাঁর সাথে সাক্ষাত করতেন, আমরাও তেমন তাঁর সাথে সাক্ষাত করব। তাঁরা উভয়ে তাঁর নিকট পৌঁছতেই তিনি কাঁদতে লাগলেন। তাঁরা তাঁকে বলেন, আপনি কাঁদছেন কেন? আপনি কি জানেন না যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর জন্য আল্লাহ্র কাছে অফুরন্ত কল্যাণ রয়েছে? তিনি বলেন, আমি এজন্য কাঁদছি না যে, আল্লাহ তা'আলার কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য কি মওজুদ রয়েছে তা আমি জ্ঞাত নই, বরং আমি এজন্য কাঁদছি যে, আসমান থেকে আর কখনও ওহী অবতীর্ণ হবে না । তাঁর এ কথায় তাঁরা উভয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লেন এবং তাঁর সাথে তাঁরাও কাঁদতে লাগলেন ।

ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।


عَلَيْهِ قَالَ أَيْنَ تُرِيدُ؟ قَالَ أُريدُ أَخَا لى فى هذه الْقَرْيَةِ قَالَ هَلْ لَكَ عَلَيْهِ مِنْ نِعْمَةٍ تَرَبُّهَا عَلَيْهِ؟ قَالَ لَا غَيْرَ أَنَّى أَحْبَبْتُهُ فِي اللَّهِ قَالَ فَإِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكَ بِأَنَّ اللهَ قَدْ أَحَبُكَ كَمَا أَحْبَبْتَهُ فِيهِ - رَوَاهُ مُسْلِمُ . يُقَالُ أَرْصَدَهُ لِكَذَا إِذَا وَكُلَّهُ يحفظه والْمَدْرَجَةُ بِفَتْحِ الْمِيم والراءِ الطَّرِيقُ وَمَعْنَى تَرَبُّهَا تَقُوْمُ بِهَا وَتَسْعَى في صلاحها .


৩৬১। আবু হুরাইরা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেনঃ এক ব্যক্তি অন্য শহরে বসবাসরত তার এক ভাইকে দেখতে গেল । আল্লাহ তাআলা তার জন্য রাস্তায় একজন ফেরেশতা নির্দিষ্ট করে দিলেন। যখন সে এ রাস্তায় আসলো, ফেরেশতা জিজ্ঞেস করল, কোথায় যাওয়ার ইচ্ছা রাখেন? লোকটি বলল, এ শহরে আমার এক ভাই থাকে, তাকে দেখার জন্য এসেছি। ফেরেশতা বলল, তার কাছে আপনার কি কোনো আকর্ষণীয় প্রাপ্য আছে, যার জন্য আপনি চেষ্টা করছেন? সে বলল, আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশেই আমি তাকে ভালোবাসি, অন্য কোনো স্বার্থ নেই। ফেরেশতা বলল, আমি আল্লাহ্র দূতরূপে আপনার কাছে এসেছি এটুকু জানানোর জন্য যে, আপনি যেমন (আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে) ঐ ব্যক্তিকে ভালোবাসেন, আল্লাহ্ও তদ্রূপ আপনাকে ভালোবাসেন।

ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ।


٣٦٢ - وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صَلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ عَادَ مَرِيضًا أَوْ زَارَ آنا لَهُ فِي اللهِ نَادَاهُ مُنَادٍ بِأَنْ طَبْتَ وَطَابَ مَمْشَاكَ وَتَبَوَات مِنَ الْجَنَّةِ مَنْزِلاً - رَوَاهُ التِّرْمِذِى وَقَالَ حَديثُ حَسَن وَفِي بَعْضِ النُّسَخِ غَرِيبٌ .


 ৩৬২। আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য রুগ্নকে দেখতে যায় অথবা নিজের ভাইয়ের সাথে সাক্ষাত করতে যায়, একজন ঘোষক তাকে ডেকে বলে, তুমি আনন্দিত হও, তোমার পথচলা কল্যাণময় হোক এবং জান্নাতে তোমার উচ্চ মর্যাদা হোক। ইমাম তিরমিজী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন । তিনি বলেছেন, এই হাদীসটি হাসান, কোনো কোনো পাণ্ডুলিপিতে গরীব বলা হয়েছে ৷


٣٦٣ - عَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّمَا مَثَلُ الْجَلِيْسِ الصَّالِحِ وَجَلِيْسِ السُّوْءِ كَحَامِلِ الْمِسْكِ وَنَافِعِ الْكِيْرِ فَحَامِلُ الْمِسْكِ اما أَنْ يُحْذِيَكَ وَإِمَّا أَنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيحًا طَيِّبَةً ونافع الكثير أما أنْ يُحْرقَ ثِيَابَكَ وَأَمَّا أَنْ تَجدَ مِنْهُ رَبَّعًا مُنْتَنَةٌ مُتَّفَقٌ عَلَيْه يُحْذِيَكَ يُعْطِيكَ.


৩৬৩। আবু মূসা আল-আশ'আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সৎ সহকর্মী ও পাপী সহযোগীর দৃষ্টান্ত হলঃ একজন কস্তুরীর ব্যবসায়ী, অপরজন কাপড় চালনাকারী (কামার)। কস্তুরীর ব্যবসায়ী হয় তোমাকে বিনামূল্যে কস্তুরী দেবে অথবা তুমি তার কাছ থেকে তা কিনে নেবে। যদি এ দু'টোর একটিও না হয়, তবে অন্তত তুমি তার কাছে এর সুঘ্রাণ পাবে। আর কাপড় চালনাকারী হয় তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে অথবা তুমি তার কাছ থেকে দুর্গন্ধ পাবে।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ।



٣٦٤ - عَنْ أبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ تُنْكَحُ الْمَرْأةُ لِأرْبَعِ لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَلِجَمَالِهَا وَلِدِيْنِهَا فَاظْفَرُ بِذَاتِ الدِّينِ تَربَتْ يَدَاكَ - مُتفقٌ عَلَيْهِ وَمَعْنَى ذلكَ أَنَّ النَّاسَ يَقْصَدُونَ فِي الْعَادَةُ مِنَ الْمَرْأَةَ هذهِ الحِصَالِ الْأَرْبَعِ فَأَحْرِضُ أَنْتَ عَلَى ذَاتِ الدِّينِ وَاظْفَرُ بِهَا وَأَخْرِضْ عَلَى صُحْبَتِهَا .


৩৬৪ । আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ চারটি বিষয় বিবেচনায় রেখে কোনো মেয়েকে বিয়ে করা হয়ঃ তার ধন-সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার রূপ-সৌন্দর্য ও তার দীনদারী। তুমি দীনদার স্ত্রী লাভে বিজয়ী হও; তোমার হাত কল্যাণে পরিপূর্ণ হবে।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। হাদীসের তাৎপর্য এই যে, পুরুষরা স্বভাবতই পাত্রী নির্বাচনে উক্ত চারটি বিষয় বিবেচনায় রাখে। অতএব তোমার দীনদার স্ত্রী লাভে আগ্রহী হওয়া উচিৎ, তাকে লাভ করার জন্য প্রবল চেষ্টা করবে এবং তাকে জীবন সংগিনী করবে।


٣٦٥ - عَنِ ابْنِ عَبَّاسِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لجبْرِيلَ مَا يَمْنَعُكَ أَنْ تَزُورَنَا أَكْثَرَ مِمَّا تَزُورُنَا ؟ فَنَزَلَتْ وَمَا نَتَنَزَّلُ الأَ بِأَمْرِ رَبِّكَ لَهُ مَا بَيْنَ أَيْدِينَا وَمَا خَلْقَنَا وَمَا بَيْنَ ذَلِكَ رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ .


৩৬৫। ইবনুল আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বললেনঃ আপনি যতবার আমাদের সাথে সাক্ষাত করেছেন তার চেয়ে অধিকবার সাক্ষাত করতে আপনাকে কিসে বাধা দেয়? তখন এ আয়াত নাযিল হলঃ “আমরা তোমার প্রতিপালকের হুকুম ছাড়া অবতীর্ণ হতে পারি না। যা কিছু আমাদের সামনে রয়েছে এবং যা কিছু আমাদের পেছনে অতীত হয়েছে আর যা কিছু এর মাঝখানে রয়েছে, সবকিছুর মালিক তিনিই। তোমার প্রতিপালক কখনও ভুলে যান না ৷ ” (সুরা মারইয়াম : ৬৪)

ইমাম বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।


٣٦٦ - عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لا تُصَاحِبُ إلا مُؤْمِنًا وَلا يَأكُل طَعَامَكَ الأتقى. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ والترمذي بِإِسْنَادِ لا بَأْسَ بِهِ


৩৬৬। আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : মুমিন ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো সংগী হয়ো না এবং তোমার খাবার যেন মুত্তাকী ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ না খায় ৷

ইমাম আবু দাউদ ও তিরমিজী ত্রুটিমুক্ত সনদসূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ।


٣٦٧ - عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الرَّجُلُ عَلَى دِيْنِ خَلِيْلِهِ فَلْيَنْظُر أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ بِاسْنَادِ صحيح وَقَالَ التِرْمِذِى حَديثُ حَسَنٌ .


৩৬৭। আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোনো ব্যক্তি তার বন্ধুর দীনের অনুসারী হয়ে থাকে। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকের খেয়াল রাখা উচিত সে কি ধরনের বন্ধু নির্বাচন করছে। দীন শব্দটি এখানে ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে এর অর্থ জীবনবিধান ছাড়াও আচার-ব্যবহার তথা জীবনাচারের সার্বিক বিষয়াবলীও।

ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী সহীহ সনদ সহকারে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী বলেছেন, এই হাদীসটি হাসান ।


٣٦٨ - عَنْ أَبِى مُوسَى الْأَشْعَرِي رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الْمُرُهُ مَعَ مَنْ أَحَبِّ مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ قِيْلَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّجُلُ يُحِبُّ الْقَوْمَ وَلَمَّا يَلْحَقُ بِهِمْ؟ قَالَ الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبُّ .


৩৬৮। আবু মূসা আল-আশ'আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোনো লোক যাকে পছন্দ করে সে তার সাথী গণ্য হবে। ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। অপর বর্ণনায় আছে : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো, এক ব্যক্তি এক সম্প্রদায়কে ভালোবাসে কিন্তু তাদের সাথে মিলিত হতে পারছে না। তিনি বলেনঃ কোনো ব্যক্তি যাদের পছন্দ করে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত।

·

٣٦٩- عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ أَعْرَابِبًا قَالَ لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَتَى السَّاعَةُ؟ قَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا أَعْدَدْتُ لَهَا ؟ قَالَ حُبُّ اللَّهِ وَرَسُولِهِ قَالَ أَنْتَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَهَذَا لَفْظُ مُسْلِمٍ وَفِي روَايَةٍ لَهُمَا مَا أَعْدَدْتُ لَهَا مِنْ كَثِيرِ صَوْمِ وَلَا صَلَاةٍ وَلا صَدَقَةٍ وَلكِنِّي أُحِبُّ الله وَرَسُولَهُ .


৩৬৯। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক বেদুঈন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, কিয়ামাত কবে হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এজন্য তুমি কি সামগ্রী সংগ্রহ করেছ? সে বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ভালোবাসা। তিনি বলেনঃ তুমি যাকে ভালোবাস তার সাথেই থাকবে । ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। মূল পাঠ মুসলিমের। তাদের উভয়ের অপর বর্ণনায় আছেঃ সে বলল, রোজা, নামাজ, সাদাকা ইত্যাদিসহ খুব বেশি কিছু সংগ্রহ করতে পারিনি, কিন্তু আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসি।।

·

۳۷۰ - عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ جَاءَ رَجُلُ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ كَيْفَ تَقُولُ فِي رَجُلٍ أَحَبِّ قَوْمًا وَلَمْ يَلْحَقُ بهِمْ؟ فَقَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبِّ- مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ .


৩৭০। ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল! এক ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়কে ভালোবাসে কিন্তু তাদের সাথে মিলিত হতে পারছে না, এ ব্যক্তি সম্পর্কে আপনি কি বলেন?। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : যে ব্যক্তি যাকে ভালোবাসে সে (কিয়ামাতের দিন) তার সাথেই থাকবে ।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ।


۳۷۱ - عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ النَّاسُ مَعَادِنُ كَمَعَادَنِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ خِيَارُهُمْ فِي الْجَاهِلِيَّةِ خِيَارُهُمْ فِي الْإِسْلامِ اذا فَقَهُوا وَالْأَرْواحُ جُنُودٌ مُجَنَّدَةٌ فَمَا تَعَارَفَ مِنْهَا اخْتَلَفَ وَمَا تَنَاكَرَ مِنْهَا اختلف رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَرَوَى الْبُخَارِيُّ قَوْلُهُ الْأَرْوَاحُ إِلَى أَخِرِهِ مِنْ رِوَايَةِ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا .


৩৭১। আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : সোনা-রূপার খনির মত মানুষও এক ধরনের খনি। তোমাদের মধ্যে যারা জাহিলী যুগে শ্রেষ্ঠ ছিল, ইসলামী যুগেও তারাই হবে শ্রেষ্ঠ, যখন তারা (দীন ইসলাম সম্পর্কে) সম্যক জ্ঞান লাভ করবে । রূহসমূহ সম্মিলিত সেনাবাহিনী। এদের মধ্যে গুণ-বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে যেগুলো একে অপরের থেকে পৃথক ছিল তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল ৷

ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম বুখারী “আরওয়াহ” শব্দ থেকে শুরু করে হাদীসের শেষ পর্যন্ত আয়িশা (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন ।


۳۷۲ - عَنْ أُسَيْرِ بْنِ عَمْرٍو وَيُقَالُ ابْنُ جَابِرٍ وَهُوَ بِضَمِّ الْهَمْرَةِ وَفَتْحِ السَّيْنِ الْمُهْمَلَة قَالَ كَانَ عُمَرُ بْنُ الْخَطاب رَضِيَ اللهُ عَنْهُ إذا اتى عَلَيْهِ امْدَادُ أهل الْيَمَنِ سَأَلَهُمْ آمِيْكُمْ أَوَيْسُ بْنُ عَامِرٍ حَتَّى أَتَى عَلَى أَوَسْ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فَقَالَ لَهُ انْتَ أوَيْسُ ابْنُ عَامِرٍ؟ قَالَ نَعَمْ قَالَ مِنْ مُرَادٍ ثُمَّ مِنْ قَرَنِ؟ قَالَ نَعَمْ قَالَ فَكَانَ بِكَ بَرَصَ فَبَرَاتَ مِنْهُ إِلا مَوْضِعَ دِرْهَم؟ قَالَ نَعَمْ قَالَ لَكَ وَالِدَةٌ؟ قَالَ نَعَمْ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ يَأْتِي عَلَيْكُم أَوَيْنُ بْنُ عَامِرٍ مَعَ امْدَادِ أَهْلِ الْيَمَنِ مِنْ مُرَادٍ ثُمَّ مِنْ قَرَن كَانَ بِهِ بَرَضٌ فَبَرَا مِنْهُ إِلَّا مَوْطِعَ درهم لَهُ وَالِدَةٌ هُوَ بِهَا بَرَّ لَو أَقْسَمَ عَلَى اللهِ لَا بَرَهُ فَإِنِ اسْتَطَعْتَ أَن يَسْتَغْفِرَ لَكَ فَافْعَلُ فَاسْتَغْفِرْ لِى فَاسْتَغْفَرَ لَهُ فَقَالَ لَهُ عُمَرُ ابْنَ تُرِيدُ؟ قَالَ الْكُوفَةَ قَالَ أَلَا اكتُبُ لَكَ إِلَى عَامِلِهَا ؟ قَالَ أَكُونُ فِي غَيْراءِ النَّاسِ أَحَبُّ إِلَى فَلَمَّا كَانَ مِنَ الْعَامِ الْمُقْبِلِ حَجٌ رَجُلٌ مِنْ أَشْرَافِهِمْ فَوَافَى عُمَرَ فَسَأَلَهُ عَنْ أُوَيْسُ فَقَالَ تَرَكْتُهُ

رَتْ الْبَيْتِ قَلِيْلَ الْمَتَاعِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ يَأْتِي عَلَيْكُمْ أَوَيْسُ بْنُ عَامِرٍ مَعَ أَمْدَادٍ مِنْ أَهْلِ الْيَمَنِ مِنْ مُرَادٍ ثُمَّ مِنْ قَرَن كَانَ ل فَبَرَا مِنْهُ إِلا مَوْضِعَ دِرْهَم لَهُ وَالِدَةٌ هُوَ بِهَا بَرَّ لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللَّهِ لَابَرَهُ فَإِنِ اسْتَطَعْتَ أَنْ يَسْتَغْفِرَ لَكَ فَافْعَل فَاتَّى أَوَسَا فَقَالَ اسْتَغْفِرْ لِي قَالَ انْتَ أحْدَثُ عَهْدًا بِسَفَرٍ صَالِحٍ فَاسْتَغْفِرْ لِى قَالَ لَقِيْتَ عُمَرَ ؟ قَالَ نَعَمْ فَاسْتَغْفَرَ لَهُ فَقَطِنَ لَهُ النَّاسُ فَانْطَلَقَ عَلَى وَجْهِهِ- رَوَاهُ مُسْلِمٌ

وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسلِمِ أَيْضًا عَنْ أُسَيْرِ بْنِ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ أَهْلَ الْكُوفَةِ وَفَدُوا عَلَى عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ وَفِيهِمْ رَجُلٌ مِمَّنْ كَانَ يَسْخَرُ بِأَوَسْ فَقَالَ عُمَرُ هل ههنا أحَدٌ مِّنَ الْقَرْنِينَ فَجَاءَ ذَلِكَ الرَّجُلُ فَقَالَ عُمَرُ إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ قَالَ إِنَّ رَجُلاً يَأْتِيْكُمْ مِنَ الْيَمَنِ يُقَالُ لَهُ أَوَيْس لَا يَدَعُ بِالْيَمَنِ غَيْرَ أُمِّ لَهُ قَدْ كَانَ بِهِ بَيَاضٌ فَدَعَا اللَّهَ تَعَالَى فَاذْهَبَهُ إِلَّا مَوْضِعَ الدِّينَارِ أَوِ الدرهم فَمَنْ لَقِيَهُ مِنْكُمْ فَلْيَسْتَغْفِرْ لَكُمْ.

وفي رِوَايَةٍ لَهُ عَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنْ خَيْرَ التَّابِعِينَ رَجُلٌ يُقَالُ لَهُ أَوَيْسَ وَلَهُ وَالِدَةٌ وَكَانَ بِهِ بَيَاضِ فَلْيَسْتَغْفِرْ لَكُمْ . قَوْلَهُ غَيْرَاءِ النَّاسِ بِفَتْحِ الْغَيْنِ الْمُعْجَمَةِ وَاسْكَانِ الْبَاءِ وَبِالْمَدِ وَهُمْ فُقَرَاؤُهُمْ وَصَعَالِيْكُهُمْ وَمَنْ لا تُعْرَفُ عَيْنُهُ مِنْ أَخْلَاطِهِمْ وَالْأَمْدَادُ جَمْعُ مَدَدٍ وَهُمُ الْأَعْوَانُ والنَّاصِرُونَ الَّذِيْنَ كَانُوا يُمِدُّونَ الْمُسْلِمِينَ فِي الْجِهَادِ


৩৭২। উসাইর ইবনে আমর (রাদিআল্লা) থেকে বর্ণিত। তাকে ইবনে জাবিরও বলা হয়। তিনি বলেন, উমার (রাদিআল্লা) এর কাছে ইয়ামানের অধিবাসীদের পক্ষ থেকে সাহায্যকারী দল আসলে তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে উয়াইস ইবনে আমের আছে কি?

বলেন, আপনি কি মুরাদ' গোত্রের উপগোত্র 'কারনের' লোক?। তিনি বলেন, হাঁ। তিনি বলেন, আপনার কি কুষ্ঠরোগ হয়েছিল, তা থেকে সুস্থ হয়েছেন এবং মাত্র এক দিরহাম পরিমাণ জায়গা অবশিষ্ট আছে? তিনি বলেন, হাঁ। তিনি বলেন, আপনার মা বেঁচে আছেন কি? তিনি বলেন, হাঁ। তিনি (উমার) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি : “ইয়ামানের সাহায্যকারী দলের সাথে উয়াইস ইবনে আমের নামক এক ব্যক্তি তোমাদের কাছে আসবে। সে মুরাদ গোত্রের উপগোত্র ‘কারনের লোক। তার কুষ্ঠরোগ হবে এবং তা থেকে সে মুক্তি পাবে, শুধু এক দিরহাম পরিমাণ জায়গা ব্যতীত।

তার মা জীবিত আছে, সে তার খুবই অনুগত । সে (আল্লাহ্র উপর ভরসা করে) কোনো কিছুর শপথ করলে আল্লাহ তা পূরণ করে দেন। যদি তুমি তাকে দিয়ে তোমার গুনাহ ক্ষমার জন্য দোওআ করাবার সুযোগ পাও তবে তাই করবে” ।

(উমার বলেন) কাজেই আপনি আমার অপরাধ ক্ষমার জন্য দোওআ করুন। অতএব তিনি (উয়াইস) তাঁর (উমারের) পাপের ক্ষমা চেয়ে দোওআ করলেন। উমার (রাঃ) তাঁকে বলেন, আপনি কোথায় যাওয়ার ইচ্ছা রাখেন?। তিনি বলেন, কৃষ্ণা (যাওয়ার আশা আছে)। তিনি বলেন, আমি সেখানকার গভর্ণরকে আপনার (সাহায্যের) জন্য লিখে দিই?।

তিনি বলেন, গরীব- মিসকীনদের মাঝে বসবাস করাই আমার কাছে অধিক প্রিয়। পরবর্তী বছর কৃষ্ণার এক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি হজ্জে এল। তার সাথে উমারের সাক্ষাত হলে তিনি উয়াইস সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করলেন। সে বলল, তাঁকে আমি এমন অবস্থায় দেখে এসেছি যে, তার ঘরটা অত্যন্ত জীর্ণ অবস্থায় আছে এবং তাঁর জীবনোপকরণ খুবই নগণ্য।

উমার (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি : “ইয়ামানের সাহায্যকারী দলের সাথে উয়াইস ইবনে আমের নামক এক ব্যক্তি তোমাদের কাছে আসবে। সে মুরাদ গোত্রের উপগোত্র কারন বংশের লোক। তার কুষ্ঠরোগ হবে এবং তা থেকে সে মুক্তি পাবে, শুধু এক দিরহাম পরিমাণ জায়গা ব্যতীত।

তার মা জীবিত আছে এবং সে তার খুবই অনুগত। সে (আল্লাহ্র উপর ভরসা করে) কোনো কিছুর শপথ করলে তিনি তা পূরণ করে দেন। যদি তুমি তোমার অপরাধ ক্ষমার জন্য তাকে দিয়ে দোওআ করানোর সুযোগ পাও, তবে তাই করবে”। লোকটি প্রত্যাবর্তন করে এসে উয়াইসের কাছে গিয়ে বলল, আপনি আমার গুনাহ মাফের জন্য দোওআ করুন।

তিনি (উয়াইস) বলেন, আপনি এইমাত্র কল্যাণময় সফর থেকে ফিরে এসেছেন, বরং আপনি আমার গুনাহ মাফের জন্য দোওআ করুন। তিনি বলেন, আপনি কি উমারের সাথে সাক্ষাত করেছেন?। সে হাঁ। উয়াইস তার জন্য দোওআ করলেন। লোকেরা উয়াইসের মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন হলে উয়াইস সেখান থেকে অন্যত্রে চলে গেলেন।


ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। মুসলিমের অপর বর্ণনায় উসাইর ইবনে জাবির (রাদিআল্লা) থেকে বর্ণিত আছে। কৃষ্ণার অধিবাসীরা উমার (রাদিআল্লা) এর কাছে একটি প্রতিনিধিদল পাঠায়। দলের এক ব্যক্তি উয়াইসকে বিদ্রূপ করত। উমার (রাঃ) বলেন, এখানে কারন বংশের কেউ আছে কি? ঐ লোকটি উঠে আসলে উমার (রাদিআল্লা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “ইয়ামান থেকে উয়াইস নামে এক ব্যক্তি তোমার কাছে আসবে। সে তার মাকে ইয়ামানে একাকী রেখে আসবে। তার কুষ্ঠরোগ হবে।

সে আল্লাহ্র কাছে দোওআ করবে, তিনি তার রোগমুক্তি দান করবেন, শুধু এক দীনার অথবা এক দিরহাম পরিমাণ জায়গা ব্যতীত। তোমাদের যে কেউ তার সাক্ষাত লাভ করবে, সে যেন তাকে দিয়ে তার অপরাধ ক্ষমার জন্য দোওআ করায়।”

মুসলিমের অপর বর্ণনায় উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি : “পরবর্তীদের (তাবিঈ) মধ্যে উয়াইস নামে একজন উত্তম লোক হবে। তার মা জীবিত আছে। তার দেহে কুষ্ঠের দাগ থাকবে। তোমরা যেন তার কাছে গিয়ে নিজেদের অপরাধ ক্ষমার জন্য তাকে দিয়ে দোওআ করাও।”


۳۷۳ - عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ اسْتَأْذَنْتُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْعُمْرَةِ فَأَذِنَ لِى وَقَالَ لَا تَنْسَانَا يَا أَخَيِّ مِنْ دُعَائِكَ فَقَالَ كَلِمَةٌ ما يَسُرُنِي أَنْ لِي بِهَا الدُّنْيَا وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ أَشْرِكْنَا يَا أَخَيِّ فِي دُعَائِكَ حَدِيث صَحِيحَ رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتَّرْمِذِى وَقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .


৩৭৩। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদিআল্লা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উমরা করার অনুমতি চাইলাম। তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন এবং বললেনঃ হে ছোট ভাই! তোমার দোওআর মধ্যে আমাদেরকে ভুলে যেও না।

(উমার বলেন), তিনি এমন একটি কথা বললেন, যার পরিবর্তে সমস্ত দুনিয়াটা আমার হয়ে গেলেও আমি খুশি হতাম না। অপর বর্ণনায় আছে, তিনি বলেনঃ হে ছোট ভাই! তোমার দোওআর মধ্যে আমাদেরকেও শরীক করবে।

এটা সহীহ হাদীস। ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

তিরমিযী বলেছেন, এটা হাসান ও সহীহ হাদীস।


٣٧٤ - عَن ابْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ا يُزُورُ قُبَاءَ راكبًا وَمَاشيًا فَيُصَلِى فِيهِ رَكْعَتَيْنِ مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَفِي رِوَايَةٍ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْتِي مَسْجِدَ قَبَاءَ كُلَّ سَبْتِ رَاكِبًا وَمَاشِيًا وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يَفْعَلُهُ.


৩৭৪। ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্তুজানে অথবা পদব্ৰজে কুবা পল্লীতে যেতেন এবং সেখানকার মসজিদে দুই রাকাআত নামাজ পড়তেন।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। অপর বর্ণনায় আছেঃ প্রতি শনিবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্তুযানে অথবা পদব্ৰজে কুবা মসজিদে আসতেন।

ইবনে উমার (রাঃ)-ও তাই করতেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
3/related/default